Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

এক নজরে ভাদেশ্বর ইউনিয়ন
 
(ক) অফিসের অবস্থানঃ ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ৪কিঃমিঃ পূর্বে রশিদপুর বাজারের পশ্চিম পার্শে অবস্থিত।
     (খ) ইউনিয়নের সীমানাঃ উত্তরে বাহুবল উপজেলার ৪নং বাহুবল সদর ইউপি, দক্ষিনে চুনারুঘাট উপজেলার ৮নং 
          সাটিয়াজুরী ইউপি, পূর্বে মৌলভী বাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১০নং ভূনবীর ইউপি এবং পশ্চিমে বাহুবল 
             উপজেলার ৫নং লামাতাশী ইউপি অবস্থিত।
    (গ)  আয়তনঃ  ৬১.৬৪ বর্গ কি.মি.।
    (ঘ)  লোক সংখ্যাঃ  ৩৪,১৪৯ জন ।
    (ঙ)  গ্রামের সংখ্যাঃ  ৫২ টি।
    (চ)  হাট-বাজারের সংখ্যা          ঃ  ০৩টি ।
    (ছ)  শিক্ষা প্রতিষ্টান          ঃ উচ্চ বিদ্যালয়-০৩টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়-১৬টি, 
                                        কৌমি মাদ্রাসা-৫টি।
    (জ)  শিক্ষার হার          ঃ  ৩৬.৬৪%।
    (ঝ)  রাস্তা ও সড়কের পরিমাণঃ  পাকা সড়ক ৩৫ কি.মি, কাঁচা  ৬০ কি.মি.  
    (ঞ)  কৃষি জমির পরিমাণঃ ৬১৬৪ হেক্টর ।
    (ট) এনজিওঃ  ০৪ টি।
    (ঠ)  পোস্ট অফিসঃ  ০১ টি।
    (ড) এফডব্লিউসিঃ ০১টি।
    (ঢ)  কমিউনিটি ক্লিনিকঃ  ০৩ টি।  
    (ণ)  হোল্ডিং সংখ্যাঃ  ৫৩১০।
    (ত)  মহাসড়কঃ ০৪ কিঃমি।
    (থ) মসজিদঃ ৮৭টি।
    (দ) মন্দিরঃ ৩৩টি।
    (ধ) মৌজাঃ ২৪টি
            
০২।  প্রশাসনঃ বর্তমান মেয়াদে ০১ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ০৩ জন সদস্যা (সংরক্ষিত আসন) এবং ০৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মন্তব্যঃ নির্বাচিত প্রশাসন সন্তোষজনক।
 
ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ঐতিহাস

সিলেটের একটি প্রবাদ প্রবচন আছে-

‍“ গাজী সাহেবের নাম শাহ সিকন্দর

চৌদ্দ বছর যুদ্ধ কুড়ালীর ভেতর

অগ্নিবান খাইয়া বেটা গেল পালাইয়া

কইতনে লইয়া আইল হযরত শাহ জালালরে গিয়া”

এতে বুঝা যাচ্ছে সিলেটের রাজা গৌড় গোবিন্দের সঙ্গে মুসলিম বাহিনীর দীর্ঘকাল যুদ্ধ বিগ্রহ চলছিল।যাদু বিদ্যায় পারদর্শী গোবিন্দ বাহিনীর অগ্নিবানে মুসলিম বাহিনী অগ্রাভিযানের মুখে বার বার বাধা প্রাপ্ত হয়েছিল। অবশেষে ১৩০৩ খ্রি: শায়খুল মুশায়েখ হযরত শাহজালাল মুজাররদে ইয়ামনী (র:) ও তদীয় সাথী ৩৬০ জন আউলিয়া সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র:) সহ সিকন্দর গাজীর সঙ্গে মিলিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করায় গৌড় রাজ্যে তথা সিলেট অঞ্চলে ইসলামের ঝান্ডা উড্ডীণ হয়। সিকন্দর গাজী হন সিলেটের প্রথম মুসলিম শাসক। রাজা গৌড় গোবিন্দের মত তরফ অঞ্চলে এক অত্যাচারী ধর্মদ্রোহী শাসক ছিল। তার নাম ছিল রাজা আচক নারায়ণ। বতর্মান বাহুবল, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু অংশ নিয়ে ছিল তরফ রাজ্য। চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বিশগাও নামক স্থানে তার রাজধানী ছিল। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে খোয়াই নদীর তীরে রাজা আচক নারায়ন এর রাজ বাড়ীর ধ্বংসাবশেষ ও মন্দীর বাড়ীর সম্মুখে বিরাট দিঘী আজও দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। রাজা আচক মাঝে মধ্যে বাহুবল উপজেলার উত্তর প্রান্তে ও ঘৌঙ্গিয়াজুরী হাওরের পূর্ব প্রান্তে বিজনা নদীর নির্মল পানিতে স্নান করতেন বলে জনশ্রুতি আছে। কালে ঐ স্থান স্নানঘাট নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে বাহুবল উপজেলার ১ নং স্নানঘাট ইউনিয়ন।

হযরত শাহজালাল (র:) সিলেটে আগমনের পূর্বে বর্তমান বাহুবল উপজেলার দক্ষিণাংশে ছিছিরকোর্ট নামক স্থানে কয়েক ঘর মুসলমান বাস করতেন বলে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস সূত্রে অবগত হওয়া যায়।

 

নামকরণ : জনশ্রুতি এবং প্রাচীন লোকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে ও নিকট অতীতে প্রকাশিত পত্র পত্রিকা হতে যা অবগত হওয়া যায় তা হলো প্রাচীন কালে ‘কুদরত মাল‍’ নামক জনৈক পাহলোয়ান অত্র এলাকায় বাস করতেন । মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ ভাগ থেকে এক পাহলোয়ান এসেছিলেন কুদরত মালের সঙ্গে মল্লযোদ্ধ করতে। দু পালোয়ানের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ মল্লযোদ্ধের পর কুদরত মাল বিজয়ী হয়ে বীরদর্পে বলে ছিলেন “বাহুবা বল দেখ বেটা” এ ঘটনাটি একটি প্রবাদ প্রবচনে প্রকাশ করা হয়েছে। “দক্ষিণ ভাগ থেকে আইলো মাল, মির মিরাইয়া চায়, কুদরত মালের ঘুষি খাইয়া গড়াগড়ি বায়”। কিংবদন্তীর সে মল্লযোদ্ধে “দেখ বাহুকা বল” থেকে “বাহুবল” নাম হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।বাহুবল উপজেলার উত্তরে নবীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে চুনারুঘাট উপজেলা, পশ্চিমে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও সাতগাও ও দিনারপুরের পাহাড় অবস্থিত। খোয়াই, করাঙ্গী, যোজনাল, কালিশিরি নদী, শত শত উপনদী ও শাখা নদী ধৌত আজকের বাহুবল উপজেলা হাওর ও পাহাড়ের মধ্যবর্তী এক প্রাচীন জনপদ। দিনারপুর পাহাড় পাদদেশে ঘেষে একদা এক সুখী সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠির আবাস গড়ে উঠেছিল বলে বিভিন্ন ইতিহাস সূত্রে অবগত হওয়া যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর বিপর্যয়ের পূর্বে অত্র এলাকা ছিল ধনে, ধান্যে, সম্পদে প্রাচুর্য্যে ইতিহাস ঐতিহ্য ভরপুর। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, আর গোয়াল ভরা গরু, এ ছিল অত্র এলাকার একটি প্রবাদ প্রবচন।এছাড়া এ ভূখন্ডে জন্ম গ্রহণ করেছেন হাজারো ওলি, আউলিয়া, গাউছ, কুতুব, সাধক, সুফী ও নায়েবে রাসুল। যারা সভ্যতার লালন বিকাশ ও সমাজ সংস্কারে  উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। উদাহরণসরুপ পীর শাহ ডেঙ্গু খা (র:), মাওলানা শাহ আব্দুল হাশিম (র:), শাহ সুফী মুজাররদ মাও: আব্দুল হামিদ (র:) এর নাম উল্লেখ করা যায় । বার আউলিয়া, মাহমুদনগর, আব্দুল্লাহপুর, মিরপুর, ওলিপুর, শাহপুর, দৌলতপুর, উত্তরসুর, হামিদনগর, ফতেহপুর প্রভূতি নামসমূহ মুসলিম ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। নুর নাজাত ও জাওয়াহির কাব্য গ্রন্থ প্রণেতা মরমী কবি সৈয়দ জহিরুল হোসেন ছিলেন বাহুবল উপজেলার মধুপুর গ্রামের অধিবাসী।পুরাতত্ববিধ ও প্রত্নত্ত্ববিদ কবি দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা জন্মগ্রহণ করেন এ উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে। এ উপজেলার বসিনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বৃটিশ ভারতে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিছাত্র মরহুম আব্দুল্লাহ এম,এ,এল,এল,বি ও প্রাক্ত এম,এল,এ ।এছাড়া বাহুবলের ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোচনায় আরো যাদের নাম উল্লেখের দাবি রাখে, তাদের মধ্যে প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রী রনজিৎ নাগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, প্রফেসর কবি আফজল চৌধুরী, সমাজসেবক আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ, উস্তাদুল উলামা মাও: তবারক আলী (র:), মাও: আব্দুর রহিম, মাও শাহ ছকির উদ্দিন, মাও: শরফ উদ্দীন শায়েখে ভেড়াখালী (র:), প্রফেসর আব্দুল মুছাব্বির, শিক্ষাবিদ আব্দুল মাঈন চৌধুরী, সমাজসেবক প্রয়াত বনারী লাল চৌধুরী, কবি সাহিত্যিক মাও: কাজী তাজুল ইসলাম গৌহরী, প্রফেসর মুর্তাজা মিয়া, শায়খুল হাদিস আল্লামা মনির উদ্দিন, মাও: নেযামুদ্দিন প্রমুখ গুণীজনদের নাম বাহুবলের ইতিহাস ঐতিহ্যে উল্লেখ করা যায়। এ উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৩৫ টি নৃ-তাত্বিক জনগোষ্টির বাস।